নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায়, সামনে সুষ্ঠু ভোটের চ্যালেঞ্জ
ঢাকা:
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী এবং অনিবার্য বাস্তবতা হিসেবে দেখছেন তারা। একই সঙ্গে তারা বলছেন, এই ঘোষণার পর নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সংশয় থাকার সুযোগ নেই। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করা।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেন, যা দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিশ্চয়তা ও জল্পনার অবসান ঘটায়। এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়াও বেশ ইতিবাচক বলে জানা গেছে।
জনমতের প্রতিফলন, বড় দলগুলোর ভূমিকা ছিল মুখ্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “সেনাপ্রধানের একটি অবস্থান ছিল—এটা আমরা মানি বা না মানি, কিন্তু অন্তরালে তাদের চাওয়া-পাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশে বড় দল কী চায়, সেটাই বাস্তবতায় রূপ নেয়।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী ট্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল। জনমতের চাপ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি ছিল—নির্বাচন এগিয়ে আনতে হবে, দ্রুত করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত সেই দাবি ও বাস্তবতার প্রতিফলন।”
ভোটের পরিবেশ ও জনগণের আস্থা ফেরানোই এখন মূল চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকরা একমত, নির্বাচন ঘোষণা একটি বড় পদক্ষেপ হলেও ভোটারদের আস্থা ফেরানো এবং অবাধ পরিবেশ তৈরি করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
সোহরাব হাসান বলেন, “গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সেই ক্ষোভ এবং বেদনা এখনও রয়ে গেছে। এবার ভোট যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, সেই জন্য দায়িত্ব এখন নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর।”
অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, “যদি কেউ ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করে, তাতেও লাভ হবে না। কারণ প্রধান নির্বাহী যখন একটি সিদ্ধান্ত দেন, তখন সেটি বাস্তবায়নে সবার ভূমিকা থাকতে হবে। এই নির্বাচন আর কেউ আটকে রাখতে পারবে না।”
ভোটের নির্ধারিত তারিখের অপেক্ষা
বিশ্লেষকদের মতে, এখন ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আরও স্বস্তি আসবে। একই সঙ্গে শুরু হতে হবে সমান সুযোগ, নিরপেক্ষ প্রশাসন ও নিরাপদ ভোটকেন্দ্র নিশ্চিত করার প্রস্তুতি।
তাদের ভাষায়, “রাজনীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।”
মন্তব্য করুন