Fahim hassan
৩০ জুলাই ২০২৫, ৩:৩৬ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ
পাঠক সংখ্যা ৭৭১ জন

রাতের ভোটের আইডিয়া কার, ফাঁস করলেন সাবেক আইজিপি মামুন

ব্যালট বাক্স ভর্তি, গুম-নির্যাতন, হেলিকপ্টারে গুলি”—প্রকাশ্যে সাবেক আইজিপির বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি

বিশেষ প্রতিবেদন | ৩০ জুলাই ২০২৫

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার এক জবানবন্দিতে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ২০১৮ সালের নির্বাচন, গুম-নির্যাতন, ও রাজনৈতিক দমনপীড়ন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছেন। রাজসাক্ষী হিসেবে দায়মুক্তির শর্তে তিনি এ জবানবন্দি দিয়েছেন, যা ইতিমধ্যে ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করেছে।

“ব্যালট বাক্স রাতেই ভরার পরিকল্পনা ছিল”

জবানবন্দিতে মামুন জানান, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করার ‘মূল ধারণাটি’ এসেছিল তৎকালীন পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারীর কাছ থেকে। মাঠ পর্যায়ে এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।

গুম-নির্যাতনে ‘উপদেষ্টা স্তর থেকে নির্দেশ’

মামুনের জবানবন্দিতে উঠে আসে, গুম, নির্যাতন ও কথিত ‘ক্রসফায়ার’–এর মতো ঘটনা বাস্তবায়নের ‘গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা’ আসত সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এসব কার্যক্রমে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিক।

তিনি বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ‘টার্গেট’ ব্যক্তিদের তুলে আনা, গুম করে রাখা এবং নজরদারির পরিকল্পনা সামরিক উপদেষ্টা নিজের পর্যবেক্ষণেই করতেন। আমি পুলিশপ্রধান হিসেবে এসব বিষয়ে পরবর্তীতে অবহিত হতাম, কিন্তু সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়ায় আমার সম্পৃক্ততা ছিল না।”

হেলিকপ্টার থেকে গুলির পরিকল্পনা ও বৈঠক

২০২৫ সালের জুলাই গণআন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার প্রস্তাবের প্রসঙ্গে মামুন বলেন, “আন্দোলনকারীদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আকাশপথে গুলি চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের তত্ত্বাবধানে এটি একটি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ হিসেবে নেয়া হয়।”

তিনি আরও জানান, ১৯ জুলাই থেকে একাধিক রাত ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমণ্ডির বাসায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। যেখানে অংশ নিতেন—স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, এসবির তৎকালীন প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির হারুন, র‌্যাব প্রধান, আনসার ডিজি, এনটিএমসি প্রধান জিয়াউল আহসানসহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

“ডিবি প্রধান হারুন ছিলেন রাজনৈতিক বাস্তবায়নের ‘জিন’”

সাবেক আইজিপি মামুন তার জবানবন্দিতে বলেন, “তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুনকে ‘জিন’ নামে ডাকতেন, কারণ তাকে রাজনৈতিক নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হতো।”

রাজসাক্ষীর স্বীকৃতি ও পরবর্তী ধাপ

চলমান মামলায় আসামি থেকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চেয়ে সম্প্রতি আবেদন করেন মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেই আবেদন মঞ্জুর করে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করেছে। এখন অপেক্ষা, ট্রাইব্যুনালে সরাসরি জবানবন্দি প্রদান এবং প্রমাণ উপস্থাপনের।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই প্রতিবেদন তথ্যভিত্তিক এবং সংশ্লিষ্ট আদালত বা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত তথ্য ও নথির ভিত্তিতে তৈরি। কোনো পক্ষের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়নি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি: রিয়াদের বাড্ডার বাসা থেকে আরও ৩ লাখ টাকা উদ্ধার

জামায়াত আমিরের খোঁজ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা

শেখ রেহানাসহ তিন সন্তানেরও বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

নাহিদের বক্তব্যে সাদিক কায়েমের প্রতিক্রিয়া

শিগগিরই নির্বাচনের সময় ঘোষণা হবে: আইন উপদেষ্টা

যা কিছু হোক, নির্বাচনে দেরি হবে না: প্রেস সচিব

আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন ট্রাম্প, জানালেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

শিবির নেতা সাদিক কায়েমকে নিয়ে নাহিদের পোস্ট

শিবির, সাদিক কাইয়ুম এবং ‘ক্যু পরিকল্পনা’ নিয়ে নাহিদের পোস্ট জাতীয় | 31st July, 2025 1:07 pm জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া সমন্বয়কদের সাবেক সংগঠন ও অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন নাহিদ ইসলাম। একইসঙ্গে, শিবির নেতা সাদিক কায়েম এবং পাঁচ আগস্টের আগে আর্মি ক্যু পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেয়া এক পোস্টে এসব বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। পোস্টে শিবির নেতা সাদিক কায়েমের বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, সম্প্রতি একটা টকশোতে তিনি বলেছেন ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার। এরপর তিনি বলেন, ‘গুরুবার আড্ডা’ পাঠচক্রের সাথে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সাথে জাবির একটা স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়। একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সকল পক্ষের সাথেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সাথেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনও সহযোগিতা করা মানে এই না যে তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। সাদিক কায়েম বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিল না জানিয়ে নাহিদ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি এই পরিচয় ব্যবহার করেছেন। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণেই সাদিক কাইয়ুমকে প্রেস ব্রিফিং এ বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাদিক কাইয়ুমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম। অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করে নাই। কিন্তু এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনও হয় নাই। আমরা সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম। আর কারা ক্ষমতার ভাগ বাঁটোয়ারা করতে চাইছে, গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে সে বিষয়ে অন্যদিন বলবো বলেও জানান এনসিপির এই নেতা। আর্মি ক্যু নিয়েও মুখ খুলেছেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, গত বছরের ২ আগস্ট রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশে কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেইট করা হয় যাতে সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য ছিল একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। আমাদের ভিতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। পাঁচ অগাস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি বলেও জানিয়েছেন নাহিদ। একই পোস্টে মির্জা ফখরুলের একটি দাবিকেও অসত্য বলে উল্লেখ করেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন জাতীয় সরকারের কোনো প্রস্তাবনা ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের দেয়া হয় নাই। তারা অন্য মাধ্যমে এ প্রস্তাবনা পেয়েছিল। এই বক্তব্যটি সত্য নয়। নাহিদের দাবি, ৫ আগস্ট রাতের প্রেস ব্রিফিং এ আমরা বলেছিলাম আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার করতে চাই। সেই প্রেস ব্রিফিং এর পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সাথে আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং হয় সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তারেক রহমান এ প্রস্তাবে সম্মত হননি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের দিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাজেশন দেন। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা বলি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে। এরপর, ৭ আগস্ট ভোরবেলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বাসায় আমরা উনার সাথে অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা করি। উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেবার আগে জনাব তারেক রহমানের সাথে আরেকটি মিটিং এ প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়।

তাসকিনের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ প্রত্যাহার করলেন বন্ধু

১০

ইরান থেকে জ্বালানি কেনায় ছয় ভারতীয় কোম্পানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

১১

৩ বিভাগে ভারি বৃষ্টির আভাস, ভূমিধসের শঙ্কা

১২

ভারতের ওপর শুল্ক বসিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বড় চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের

১৩

প্লট দুর্নীতির ৩ মামলায় শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

১৪

ভেঙে গেছে আতাই নদীর বাঁধ, শতাধিক পরিবার পানিবন্দি

১৫

পাসপোর্ট পাবেন না তিন শ্রেণির লোক

১৬

আফ্রিকান নারীদের শরীরে ক্যানসার ছড়াচ্ছে ত্বক ফর্সাকারী পণ্য

১৭

৩ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা

১৮

মুরাদনগরে বিএনপি-এনসিপি পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ১০

১৯

‘বাংলাদেশের অবস্থা ভারতের চেয়ে ভালো, তারা কেন ভারতে আসবে?’

২০