ব্যালট বাক্স ভর্তি, গুম-নির্যাতন, হেলিকপ্টারে গুলি”—প্রকাশ্যে সাবেক আইজিপির বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি
বিশেষ প্রতিবেদন | ৩০ জুলাই ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার এক জবানবন্দিতে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ২০১৮ সালের নির্বাচন, গুম-নির্যাতন, ও রাজনৈতিক দমনপীড়ন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছেন। রাজসাক্ষী হিসেবে দায়মুক্তির শর্তে তিনি এ জবানবন্দি দিয়েছেন, যা ইতিমধ্যে ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করেছে।
“ব্যালট বাক্স রাতেই ভরার পরিকল্পনা ছিল”
জবানবন্দিতে মামুন জানান, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করার ‘মূল ধারণাটি’ এসেছিল তৎকালীন পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারীর কাছ থেকে। মাঠ পর্যায়ে এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
গুম-নির্যাতনে ‘উপদেষ্টা স্তর থেকে নির্দেশ’
মামুনের জবানবন্দিতে উঠে আসে, গুম, নির্যাতন ও কথিত ‘ক্রসফায়ার’–এর মতো ঘটনা বাস্তবায়নের ‘গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা’ আসত সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এসব কার্যক্রমে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিক।
তিনি বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ‘টার্গেট’ ব্যক্তিদের তুলে আনা, গুম করে রাখা এবং নজরদারির পরিকল্পনা সামরিক উপদেষ্টা নিজের পর্যবেক্ষণেই করতেন। আমি পুলিশপ্রধান হিসেবে এসব বিষয়ে পরবর্তীতে অবহিত হতাম, কিন্তু সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়ায় আমার সম্পৃক্ততা ছিল না।”
হেলিকপ্টার থেকে গুলির পরিকল্পনা ও বৈঠক
২০২৫ সালের জুলাই গণআন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার প্রস্তাবের প্রসঙ্গে মামুন বলেন, “আন্দোলনকারীদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আকাশপথে গুলি চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের তত্ত্বাবধানে এটি একটি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ হিসেবে নেয়া হয়।”
তিনি আরও জানান, ১৯ জুলাই থেকে একাধিক রাত ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমণ্ডির বাসায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। যেখানে অংশ নিতেন—স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, এসবির তৎকালীন প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির হারুন, র্যাব প্রধান, আনসার ডিজি, এনটিএমসি প্রধান জিয়াউল আহসানসহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
“ডিবি প্রধান হারুন ছিলেন রাজনৈতিক বাস্তবায়নের ‘জিন’”
সাবেক আইজিপি মামুন তার জবানবন্দিতে বলেন, “তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুনকে ‘জিন’ নামে ডাকতেন, কারণ তাকে রাজনৈতিক নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হতো।”
রাজসাক্ষীর স্বীকৃতি ও পরবর্তী ধাপ
চলমান মামলায় আসামি থেকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চেয়ে সম্প্রতি আবেদন করেন মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেই আবেদন মঞ্জুর করে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করেছে। এখন অপেক্ষা, ট্রাইব্যুনালে সরাসরি জবানবন্দি প্রদান এবং প্রমাণ উপস্থাপনের।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
এই প্রতিবেদন তথ্যভিত্তিক এবং সংশ্লিষ্ট আদালত বা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত তথ্য ও নথির ভিত্তিতে তৈরি। কোনো পক্ষের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়নি।
মন্তব্য করুন