১৫ বছরে ৮ বিয়ে, কোটি টাকার প্রতারণা—নাগপুরে ধরা পড়ল ‘বিয়াবাজ’ সামিরা ফাতিমা
স্টাফ রিপোর্টার | ১ আগস্ট ২০২৫ | নাগপুর, ভারত
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুরের একটি সাধারণ চায়ের দোকানে সদ্য পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে আড্ডায় ব্যস্ত এক নারী। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি সাধারণ দৃশ্য হলেও, সেই চা-আড্ডা থেকেই ফাঁস হয়ে গেল বছরের পর বছর ধরে চলা একটি ভয়ংকর প্রতারণার গল্প। পুলিশের দীর্ঘদিনের নজরদারির পর অবশেষে ধরা পড়লেন সেই নারী— সামিরা ফাতিমা।
🎭 শিক্ষিকা থেকে ‘বিয়াবাজ’: প্রতারণার গল্প
পেশায় একসময় স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন সামিরা ফাতিমা। তবে চাকরির সীমিত আয়ে সন্তুষ্ট না হয়ে বেছে নেন অন্য এক ‘পেশা’—বিয়ের নামে পরিকল্পিত প্রতারণা। পুলিশের তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে অন্তত আটটি বিয়ে করেছেন সামিরা, যেগুলোর প্রতিটিই ছিল অর্থ আদায়ের কৌশল।
প্রতারণার লক্ষ্যে তিনি টার্গেট করতেন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, বিবাহিত মুসলিম পুরুষদের। ফেসবুক বা ঘটকালি ওয়েবসাইটে নিজেকে ‘ডিভোর্সি ও সন্তানের মা’ পরিচয়ে তুলে ধরতেন। এরপর আবেগঘন গল্প শুনিয়ে গড়ে তুলতেন সম্পর্ক।
💸 টার্গেট—টাকা, অস্ত্র—আবেগ
যখন সম্পর্ক গাঢ় হতো, তখন হতো বিয়ের আয়োজন। কিন্তু বিয়ের পরই বদলে যেত দৃশ্যপট। শুরু হতো ব্ল্যাকমেইল—আইনগত ঝামেলা, সামাজিক বদনাম, পরিবারে লজ্জা ইত্যাদির ভয় দেখিয়ে আদায় করতেন মোটা অঙ্কের টাকা।
এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, সামিরা বিয়ের কিছুদিন পর তাকে ছেড়ে চলে যান এবং এরপর ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। আরেকজনের দাবি, তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
🕵️ পুলিশের অভিযানে ধরা
প্রথমদিকে লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। কিন্তু সম্প্রতি দু’জন ভুক্তভোগী পুলিশের শরণাপন্ন হন। এর পরপরই নাগপুর পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে সামিরাকে নবম বিয়ের চেষ্টাকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, সামিরার এক সহযোগী চক্রও রয়েছে যারা তার জন্য উপযুক্ত পাত্র খুঁজে দিত। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদেরও শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে।
🧾 উপসংহার
ভারতের মতো সমাজে যেখানে বিয়ের বন্ধন পবিত্র বলে বিবেচিত, সেখানে এই ঘটনাটি শুধু প্রতারণা নয়, বরং সামাজিক মূল্যবোধের ওপর বড় আঘাতও বটে। নাগপুর পুলিশ জানিয়েছে, সামিরার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং যারা তার এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন