১৯৯০-এর দশক: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন
১৯৮২ সালে এরশাদ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
জামায়াতে ইসলামী প্রথমে কিছুটা নিরপেক্ষ থাকলেও পরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এরশাদ সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দেয়।
এই সময়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্য গড়ে ওঠে, যেখানে জামায়াতের অবস্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন
১৯৯১ সালের গণতান্ত্রিক নির্বাচন ছিল স্বৈরাচার পতনের পর প্রথম নির্বাচন।
জামায়াতে ইসলামী এতে এককভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ১৮টি আসন পায়, যা দলটির জন্য একটি বড় সাফল্য ছিল।
বিএনপি তখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও জামায়াতসহ অন্যান্য দলের সমর্থনে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করতে সক্ষম হন।
চারদলীয় জোট গঠন – ১৯৯৯
১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়।
১৯৯৯ সালে বিএনপি নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী বিরোধী জোট গঠিত হয়, যার নাম দেওয়া হয়:
চারদলীয় জোট
অংশগ্রহণকারী দলসমূহ:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)
ইসলামী ঐক্যজোট
এই জোটের মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং আগামী নির্বাচনে বিজয় অর্জন।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন ও সরকার গঠন
চারদলীয় জোট ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয় পায়।
জামায়াত পায় ১৭টি আসন এবং দুইজন মন্ত্রী হয়:
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (সামাজিক কল্যাণ মন্ত্রী)
মতিউর রহমান নিজামী (শিল্পমন্ত্রী)
২০০৮ সালের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবর্তন
২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল চাপে পড়ে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট অংশ নিলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয়লাভ করে।
জামায়াত তখন মাত্র ২টি আসন পায়।
২০ দলীয় জোট – ২০১২
রাজনৈতিক শক্তি পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বিএনপি ২০১২ সালে চারদলীয় জোটকে সম্প্রসারণ করে ২০ দলীয় জোট গঠন করে।
জামায়াতে ইসলামী এই জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসেবে অংশ নেয়।
এই জোটের মূল দাবি ছিল:
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা
গণগ্রেপ্তার ও দমননীতি বন্ধ করা।
জামায়াতের নির্বাচন অংশগ্রহণ বন্ধ ও দলীয় সংকট
২০১৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে।
এর ফলে দলটি জাতীয় নির্বাচনসহ অনেক নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
এরপর থেকে জামায়াত জোটে থাকলেও স্বাধীনভাবে প্রার্থী দিতে পারছিল না, বরং স্বতন্ত্র বা অন্য দলের ব্যানারে দাঁড়াত।
সারাংশ:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মূলত দুটি বড় জোটে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে:
দুই ক্ষেত্রেই জামায়াত বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে কাজ করেছে।
মন্তব্য করুন