Alam
৩১ জুলাই ২০২৫, ৪:১৫ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ
পাঠক সংখ্যা ২৬ জন

আফ্রিকান নারীদের শরীরে ক্যানসার ছড়াচ্ছে ত্বক ফর্সাকারী পণ্য

লিড:
আফ্রিকার টোগোতে সম্প্রতি ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনী ব্যবহারকারী এক নারীর মৃত্যুর পর এ ধরণের পণ্যের স্বাস্থ্যঝুঁকি আবারও সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এসব ক্রিম শুধু ত্বক নয়, শরীরকেও ধীরে ধীরে বিষিয়ে তোলে।

মূল প্রতিবেদন:
টোগোর এক ৬৫ বছর বয়সী নারী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুই মাসের মাথায় মৃত্যুবরণ করেন। চিকিৎসকদের মতে, তার শরীরে জমা হওয়া রাসায়নিক বিষক্রিয়া ছিল মৃত্যুর মূল কারণ। এই বিষক্রিয়া এসেছে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মাধ্যমে।

এই ঘটনা একক নয়। আফ্রিকার অনেক দেশেই এমন মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে বহু পুরোনো একটি উপনিবেশিক সৌন্দর্য ধারণা—যেখানে ফর্সা ত্বককে শ্রেষ্ঠত্ব, আকর্ষণ এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফর্সা ত্বক পাওয়ার আশায় যে সমস্ত পণ্য ব্যবহার করা হয়, তার অধিকাংশই মেলানিন ধ্বংস করে। অথচ মেলানিন ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নারীদের মধ্যে ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহারের হার ২৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। এসব পণ্যের বাজারও দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে এই বাজার ১৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯০ সালেই হাইড্রোকুইনোন নিষিদ্ধ করা হয়। পরে রুয়ান্ডা, তানজানিয়া, ঘানা ও অন্যান্য দেশও একই পদক্ষেপ নেয়। তবে দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে এইসব পণ্য এখনো বাজারে সহজলভ্য। অনেক দোকান ও ফেরিওয়ালার কাছ থেকে এসব বিপজ্জনক পণ্য কেনা যাচ্ছে।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এনকোজা ডলোভা জানান, তার ক্লিনিকে প্রতিদিন এমন রোগী আসেন, যারা ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত। ব্রণ, ছত্রাক সংক্রমণ, রোসেশিয়া, স্থায়ী দাগ ও স্ট্রেচ মার্কসহ নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। অনেকের ত্বকে এমন ক্যানসার হয়েছে, যা সহজে নিরাময়যোগ্য নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক রোগী ১৫–২০ বছর ধরে একই ধরনের পণ্য ব্যবহার করেছেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি কিছু পরিবার শিশু ও নবজাতকদেরও এসব পণ্য ব্যবহার করাচ্ছেন, যা আরও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিজ্ঞাপন ও ফ্যাশন জগতেও এই সংকটের প্রভাব রয়েছে। স্মার্টফোন ফিল্টার ও ফটো এডিটিং অ্যাপগুলোর মাধ্যমে ফর্সা ত্বককে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা মনস্তাত্ত্বিকভাবে ত্বকের প্রতি অসন্তুষ্টি বাড়াচ্ছে।

অধ্যাপক ডলোভার মতে, শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, দরকার সামাজিক সচেতনতা। বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন ত্বকের রঙের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকেই শিশুদের আত্মসম্মানবোধ গড়ে তোলা অপরিহার্য।

উপসংহার:
ত্বক ফর্সাকারী পণ্য নিয়ে শুধু চিকিৎসকদের সতর্কতাই যথেষ্ট নয়। দরকার সমাজব্যাপী একটি মানসিক পরিবর্তন—যেখানে গায়ের রঙ নয়, মানুষের গুণই হবে মর্যাদার মাপকাঠি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ

জামায়াত আমিরকে দেখতে হাসপাতালে নাহিদ

ইউ আকৃতির আসন: যেভাবে বদলে যাচ্ছে ভারতের শ্রেণিকক্ষের চিত্র

শাহজিবাজার গ্রিডে আগুন লাগায় বিদ্যুৎহীন হবিগঞ্জ

র‌্যাঙ্কিং পদ্ধতিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সিদ্ধান্ত কমিশনের

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিলে মামলা করবে জামায়াত

গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের উদ্ধার প্রসঙ্গে সেনাসদরের বক্তব্য

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সামাজিক বৈষম্য কমায়: ডা. বিধান রঞ্জন

মার্কিন ভিসা: শিক্ষার্থীদের যে নির্দেশনা দিলো ঢাকার দূতাবাস

পিআর পদ্ধ‌তিতে উচ্চকক্ষ চায় কমিশ‌ন, রা‌জি নয় বিএনপি

১০

১০ আগস্ট থেকে ভারতের ‘ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি’ বাড়ছে

১১

সেই রাজ্জাকের আরেক বাসার খোঁজ পেল পুলিশ, টাকা উদ্ধার

১২

মেন্দি সাফাদির সঙ্গে মিটিং নয়, ছবি তুলেছিলেন নুর

১৩

১০০ আসনের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত কমিশনের

১৪

সরকারে এলে ৫০ লাখ নারীকে ফ্যামিলি কার্ড দেয়ার ঘোষণা তারেক রহমানের

১৫

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দি‌লে মামলায় যাবে জামায়াত

১৬

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি: রিয়াদের বাড্ডার বাসা থেকে আরও ৩ লাখ টাকা উদ্ধার

১৭

জামায়াত আমিরের খোঁজ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা

১৮

শেখ রেহানাসহ তিন সন্তানেরও বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

১৯

নাহিদের বক্তব্যে সাদিক কায়েমের প্রতিক্রিয়া

২০