আমেরিকায় শ্রমিক ধর্মঘটে ‘আবর্জনাময় গ্রীষ্ম’, দুর্ভোগে লাখো নাগরিক
ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের মাঝে আমেরিকার একাধিক শহরে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়াবহ সংকট—ডাস্টবিন উপচে পড়া ময়লা, বাতাসে মাছির ঝাঁক, দুর্গন্ধময় রাস্তা ও আবর্জনার পাহাড়। এর পেছনে রয়েছে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শ্রমিকদের ধর্মঘট। খবর বিবিসির।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ‘রিপাবলিক সার্ভিসেস’-এর কয়েক হাজার কর্মী গত তিন সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন, যার ফলে অন্তত পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের শহরগুলোতে আবর্জনা সংগ্রহ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
কী কারণে এই ধর্মঘট?
শ্রমিকদের দাবি, কম বেতন, সীমিত সুযোগ-সুবিধা ও কাজের চাপ—এসব কারণে তারা অসন্তুষ্ট। শ্রমিক সংগঠন ‘টিমস্টার্স ইউনিয়ন’ অভিযোগ করেছে, কোম্পানি তাদের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ ও অন্যায্য আচরণ করছে। অন্যদিকে, রিপাবলিক সার্ভিসেস ইউনিয়নের বিরুদ্ধে গাড়ি চুরি, ভাঙচুর এবং হুমকি দেওয়ার মতো অভিযোগ এনেছে, যা শ্রমিক ইউনিয়ন সরাসরি অস্বীকার করেছে।
নাগরিক দুর্ভোগ চরমে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্জ্য সংকট খুব দ্রুত জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে, যা ধর্মঘটরত শ্রমিকদের দাবিকে বাড়তি গুরুত্ব এনে দেয়। ম্যাসাচুসেটসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ট্রাকচালক মাইক ওর্তিজ বলেন,
“আমরা যে বেতন পাচ্ছি, তাতে চলা সম্ভব না। খরচ দিন দিন বাড়ছে।”
বস্টন, গ্লস্টার, মালডেনসহ একাধিক শহরে মশা, মাছি ও ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। মালডেন শহরের এক কফিশপ মালিক গ্লেইসি স্যান্টোস বলেন,
“সপ্তাহে একবার ময়লা না সরালে আমরা ব্যবসা চালাতেই পারি না।”
প্রশাসনের জোর পদক্ষেপ ও আইনি লড়াই
বস্টনের মেয়র মিশেল উ সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রিপাবলিক সার্ভিসেসকে। তিনি বলেন,
“এই ব্যর্থতা শহরের নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
গ্লস্টারসহ ছয়টি শহর কোম্পানির বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।
অন্যদিকে, কোম্পানি ও ইউনিয়নের মধ্যে শেষ বৈঠক শুক্রবার ফলপ্রসূ হয়নি, এবং পরবর্তী বৈঠকের তারিখও নির্ধারিত হয়নি।
সমঝোতার কিছু আশার আলো
ওয়াশিংটনের লেসি শহরে এক সপ্তাহ পর সমঝোতা হয়েছে, এবং ফিলাডেলফিয়ায় মাত্র আট দিনের ধর্মঘটেই চুক্তি সম্পন্ন হয়। তবে বেশিরভাগ শহরেই এখনো সমস্যা রয়ে গেছে।
কিছু স্থানীয় প্রশাসন নিজের লোকবল ব্যবহার করে, আবার কেউ কেউ নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু তা এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
শেষ কথা
এই ‘আবর্জনাময় গ্রীষ্ম’ আমেরিকার লাখো নাগরিকের জনজীবনে এক নতুন দুর্ভোগের নাম হয়ে উঠেছে। যতদিন না কোম্পানি ও ইউনিয়নের মধ্যে সমঝোতা হচ্ছে, ততদিন আবর্জনার গন্ধে, মাছির ঝাঁকে ও নাগরিক বিরক্তিতে আমেরিকার অনেক শহরের সকাল শুরু হবে—সে সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন