সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেছেন, গত সরকারের আমলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যেভাবে লুটপাট হয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হয়েছে কি না—সেটা নিয়েই এখন সন্দেহ রয়েছে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ব্যাংকের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে, যা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নজিরবিহীন। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ব্যাংক খাত পুনর্গঠনে আগে ১৮ বিলিয়ন ডলার চাইলেও এখন সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধসে পড়ছে:
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ভেঙে পড়েছে, অথচ মানবসম্পদে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। তার মতে, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া যত সংস্কারই করা হোক, তা ফলপ্রসূ হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্ত কারও কার্যকর জবাবদিহিতা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝেও সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।”
সভাপতির বক্তব্য:
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বইটির লেখক ও সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, “ক্ষমতার একচ্ছত্র কেন্দ্রীকরণ থেকেই স্বৈরতন্ত্রের জন্ম হয়। এটি দূর করতে হবে।”
বিএনপির প্রতিক্রিয়া:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জবাবদিহিতার অভাবে দুর্নীতি বেড়েছে। “রাতারাতি সব ঠিক হবে না, তবে গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে বসে থাকাও যাবে না,” বলেন তিনি।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের অভিমত:
অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র জনগণের হাতে যাওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি, বরং একটি শাসকনির্ভর কাঠামো তৈরি হয়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্বল শাসন ও কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার কারণেই রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ঘটেছে।
গবেষক ও লেখক আলতাফ পারভেজ বলেন, সমস্যার মূল জায়গায় না গিয়ে সংস্কার সম্ভব নয়। “গত ৫০ বছর ধরেই আমরা এক ধরনের স্বৈরতন্ত্রে বসবাস করছি,” বলেন তিনি।
মন্তব্য করুন