বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা গঠনে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির সম্ভাব্যতা ও বাস্তবতা নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ ও প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।
সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ এন্ড থটস আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি: পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, বর্তমানে প্রচলিত একক-প্রার্থীভিত্তিক পদ্ধতি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিকেলে ঢাকার সিরড্যাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় উঠে আসে গণতন্ত্র, প্রতিনিধিত্ব ও সুশাসনের প্রশ্নে পিআর পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা ও চ্যালেঞ্জ।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “বাংলাদেশের কোন নির্বাচনই আদর্শ হয়নি। পিআর পদ্ধতি আপাতত প্রাসঙ্গিক মনে হলেও জনগণের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো প্রয়োজন।”
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন জানান, “২০০৮ সালেই আমরা ইশতেহারে পিআর অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। তখন কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এখন অনেকেই গণতন্ত্রের কথা বলছেন, অথচ বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা এড়িয়ে যাচ্ছেন।”
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শামিমা তাসনীম বলেন, “বর্তমান ব্যবস্থায় কিছু নির্দিষ্ট প্রভাবশালী নেতারাই বারবার নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে নৈতিকতার সংকট থাকলে যে পদ্ধতিই আসুক, তাতে পরিবর্তন আসবে না।”
তুরস্কের আতাতুর্ক ইউনিভার্সিটির ড. মুমিন বলেন, “বাংলাদেশের জন্য তুরস্কের মতো ৫% ভোট-প্রাপ্তির শর্তসহ পিআর পদ্ধতি প্রণয়ন করা যেতে পারে। এটি ফ্যাসিবাদী মনোভাবের প্রতিকার হতে পারে।”
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব গভর্ণেন্সের ড. জুবায়ের বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে ছোট দলগুলো প্রবেশাধিকার পাবে—যা একদিক দিয়ে ইতিবাচক, তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার চ্যালেঞ্জও আনতে পারে। তুরস্কের মত একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে এ পদ্ধতি কার্যকর করা যেতে পারে।”
সাবেক সামরিক কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মাকসুদুল হক বলেন, “যে কোনো পদ্ধতি গ্রহণের আগে আমাদের পুলিশ-প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ তা নিশ্চিত করা জরুরি।”
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আশরাফ আল দীন বলেন, “পিআর নতুন কিছু নয়, বিশ্বের বহু দেশেই ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের দেশের জনগণকে এর জন্য প্রস্তুত করতে হবে।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন ড. মোহাম্মদ আবদুর রব এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন প্রফেসর ড. এ কে এম ওয়ারেসুল করিম।
বক্তারা একমত হন যে, পিআর পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন এবং নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।
মন্তব্য করুন