সিলেট প্রতিনিধি
জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে দায়ের করা একটি মামলার আসামি তালিকা থেকে ১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে বাদ দিতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় চিঠি দিয়েছে ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি। ২৫ ডিসেম্বরের এ চিঠিতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এসটিএম ফখর উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিছবাহর স্বাক্ষর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে মামলার বাদী সাহেদ আহমদের পরিচয়সহ জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বরও সংযুক্ত ছিল, যদিও তার নম্বরে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। চিঠিতে যাদের বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত—এমন তথ্যই উঠে এসেছে স্থানীয় সূত্র ও তদন্তে।
তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সাইদুর রহমান পিন্টু, স্থানীয় যুবলীগ নেতা আমির আলীসহ আরও অনেকে, যারা আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এমনকি, কেউ কেউ ছাত্রলীগের পূর্বতন কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
এই চিঠি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রশ্ন করা হলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিছবাহ দাবি করেন, আসামিরা বিএনপির সমর্থক এবং একটি স্থানীয় কমিটি তাদের চিহ্নিত করেছে। কেন্দ্রীয় দলীয় কোনো নির্দেশনা ছাড়াই স্থানীয় পর্যায়ে থানা পুলিশের কাছে তারা চিঠি দিয়েছেন বলে জানান।
তবে চিঠিতে স্বাক্ষর থাকা সত্ত্বেও উপজেলা সভাপতি এসটিএম ফখর উদ্দীন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “এটা সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে হবে।” পরে সাধারণ সম্পাদকও জানান, তারা এই চিঠি দেননি এবং পরে থানায় আরেকটি চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেন, আগের চিঠিতে জাল স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, কোনো দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের আসামি বাদ দেওয়ার আবেদন আইনসিদ্ধ নয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। প্রকৃত দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
একদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে মামলা থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের অব্যাহতির অনুরোধ, অন্যদিকে সেই চিঠি ভুয়া দাবি করে নতুন চিঠির মাধ্যমে স্বাক্ষর জালের অভিযোগ—পুরো ঘটনাটিকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ও আইনি জটিলতা। তদন্তে বিষয়টির সঠিক সত্যতা সামনে আসবে বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
মন্তব্য করুন