উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে এক বিভীষিকাময় সকাল। পোড়া গন্ধ মিশে গেছে ইউনিফর্মে, ধোঁয়া ছুঁয়ে গেছে স্বপ্ন। যে স্থানে দিনের সূচনা হয়েছিল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রার্থনায়, সেখানে রাত নামল অসংখ্য নিথর দেহ আর কান্নার গর্জনে।
১৪ বছর বয়সী সায়ান ইউসুফ—মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সকালে স্কুলে এসেছিল চোখে স্বপ্ন, হাতে খাতা, বুকভরা আনন্দ নিয়ে। কেউ কল্পনাও করেনি, সেই ছেলেটি আর কখনো হাসবে না। রাত ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল আগুনে।
হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তার বাবা ইউসুফ, মাইলস্টোন কলেজের একজন কেমিস্ট্রি শিক্ষক। স্ত্রীও একই প্রতিষ্ঠানে কেমিস্ট্রির লেকচারার। আজ সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তারা শুধু সন্তানহারা এক দম্পতি। ভাঙা গলায় ইউসুফ বলেন, “এই দেশে আর থাকব না। রাজনীতিবিদরা দেশটাকে নষ্ট করে ফেলেছে। এখানে বেঁচে থাকার কোনো মানে নেই।”
সকালে যে বাবা-মায়েরা হাসিমুখে সন্তানকে স্কুলে নামিয়ে দিয়েছিলেন, সন্ধ্যায় তাদের অনেকেই ছুটে এসেছেন হাসপাতালের সামনে। কেউ জানতেই পারেননি, কখন তাদের সন্তান আগুনে পুড়ে চলে গেছে অনন্তের পথে। কেউ এখনো জানেন না, তাদের প্রিয় মুখটি বেঁচে আছে কিনা। যারা বেঁচে আছেন, তারা হাসপাতালের করিডোরে সৃষ্টিকর্তার করুণা প্রার্থনায় নতজানু।
বার্ন ইউনিটের ভেতরে যেন কান্নার সুর গুঞ্জরিত হয় প্রতিটি দেয়ালে। কেউ হতবাক, কেউ লুটিয়ে পড়ছেন বারবার। শুধু উত্তরায় নয়, শোক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নগরজুড়ে। কোনো শিক্ষার্থী স্কুল ছুটির ঘণ্টা শোনার আগেই পৃথিবী থেকে ছুটি নিয়ে নিয়েছে।
সায়ানের এক আত্মীয় বলেন, “রাত তিনটার পর থেকে কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। ওসির আসার কথা ছিল, কিন্তু আসেননি। এখন মর্গে পাঁচটা লাশ পড়ে আছে।”
সায়ানের মা তখন কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। শরীরে স্যালাইন, চোখে নিঃশেষ বেদনা। যখন তারা সন্তানের পোড়া হাত দেখলেন, তখন আর শুধু চোখে পানি নয়, বুকের ভেতর ফেটে পড়েছে এক অসীম হাহাকার।
উল্লেখ্য, সোমবার (২১ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুলের পাশে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ বহু হতাহতের প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে।
মন্তব্য করুন