রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে দুর্বৃত্তায়ন ও অনিয়ম দূর করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও গণতন্ত্রের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি ঘটবে না—এমন মত দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তার মতে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে মুখর হতে পারে।
রোববার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ভয়েস নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
বদিউল আলম বলেন, রাজনীতি এখন একটি ব্যবসায়িক খাতের মতো হয়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বিপুল সম্পদের মালিকানার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ২০০৮ সালের কয়েকটি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সম্পদ বিবরণী তুলে ধরেন। তার তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনের পর পাঁচ বছরে খুলনা সিটির মেয়রের সম্পদ বাড়ে ১৪ হাজার শতাংশেরও বেশি। বরিশাল সিটির মেয়রের সম্পদ বৃদ্ধি পায় ৫,৯১৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ২,৩০৮ শতাংশ, এবং সিলেটে ৬০৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী ক্ষেত্র এখনও অগোছালো ও দুর্বৃত্তায়নের কবলে। প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই, দলগুলোর আয়–ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ছাড়া বড় কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব উপেক্ষিত থাকায় তিনি আক্ষেপ জানান।
সেমিনারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকারের উপদেষ্টারা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী তা নিয়মভঙ্গ কিনা—এটা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, তত্ত্বগতভাবে নির্বাচন সহজ মনে হলেও বাস্তবতা অত্যন্ত জটিল। তিনি আশঙ্কা করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ও অস্ত্রের ব্যবহার আরও বাড়তে পারে। এজন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে হবে।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, আসন্ন নির্বাচনে যেন কোনো ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী অংশ নিতে না পারে—সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের পরও তাদের কর্মকাণ্ড জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে নতুন ডিসি–এসপিসহ কয়েকটি পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে নিরপেক্ষতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যেকোনো সময় প্রশ্ন উঠতে পারে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. সাহাবুল হক। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ভয়েস নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জসীম উদ্দিন। আরও বক্তব্য দেন এনসিপি নেতৃবৃন্দ আরিফুল ইসলাম আদীব ও সারোয়ার তুষার, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়ারেছুল করিম, এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।
মন্তব্য করুন