তিতাস প্রতিনিধি
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের মানিককান্দি গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে আবুল মোল্লা গ্রুপ এবং সাইফুল মেম্বার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় তিতাস থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করে।
পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের আশঙ্কায় সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে অস্ত্রধারী অবস্থায় ৭ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে একজন স্থানীয় এবং বাকিরা বহিরাগত। তারা সবাই আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন মোল্লার অনুসারী বলে জানা গেছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন—মানিককান্দি গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে শাহজাহান (৫৫), দাউদকান্দি উপজেলার টামটা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রায়হান (২১), একই গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে জিসান মাহমুদ (২০), মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে মো. আরিফ (২০), মো. আলম মিয়ার ছেলে মো. আশরাফুল (২০), মনির হোসেনের ছেলে মো. ফয়সাল (২১) এবং রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. মাঈনুদ্দিন (২০)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর একই ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা জহির মোল্লাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই এসহাক মোল্লা জুয়েল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে সাইফুল মেম্বার গ্রুপের অন্তর্গত প্রায় ৪০টি পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে আবুল মোল্লা গ্রুপ মামলার আসামিদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। দুই বছর ধরে ওই গ্রুপ গ্রামে আধিপত্য বজায় রাখে।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে সাইফুল মেম্বার গ্রুপ গ্রামে প্রবেশ করে আবুল মোল্লার অনুসারীদের বিতাড়িত করে এবং তাদের বসতবাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। একই সঙ্গে মৎস্য প্রকল্পের মাছও লুট করা হয়।
প্রায় ১১ মাস পর রোববার সকালে আবুল মোল্লার লোকজন দলবলসহ অস্ত্র নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করলে পুনরায় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদউল্যাহ বলেন, “আবুল মোল্লা ও সাইফুল মেম্বারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। আজ আবুল মোল্লার লোকজন গ্রামে আসলে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ জনকে আটক করা হয়। বর্তমানে গ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
এদিকে, স্থানীয়দের দাবি, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রশাসনের তৎপরতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। তারা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি যে কোনো সময় আবারও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
মন্তব্য করুন