📰
নতুন নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠন ও দিকনির্দেশনা
ঢাকা, ২৭ জুলাই:
এক বছর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে রূপ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন একটি নতুন মোড়ে। ২৫ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব। সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি হয়েছেন রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশীদ) এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মো. ইনামুল হাসান।
রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ বলেন,
“প্ল্যাটফর্মটির ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকলেও, অভ্যুত্থানের পর অনেকেই এর নাম ব্যবহার করে অপকর্মে লিপ্ত হয়। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব গঠন ছিল সময়ের দাবি।”
🔁
পটভূমি: আন্দোলন থেকে অভ্যুত্থান
- ২০২3 সালের ১ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের সূত্রপাত।
- সরকারি দমন–পীড়নের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন দ্রুতই গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
- জুলাই–আগস্টে তা পরিণত হয় গণ–অভ্যুত্থানে, যার ফলশ্রুতিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা ছাড়ে এবং দেশত্যাগ করেন।
- সেই অভ্যুত্থানের ফলেই সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনের অবসান ঘটে।
🏛️
রাজনৈতিক পরিণতি ও এনসিপি’র আত্মপ্রকাশ
- অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথভাবে গঠন করে নতুন রাজনৈতিক দল “জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)”।
- রিফাত রশীদ সে সময় এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব পদে ছিলেন, যা থেকে তিনি সম্প্রতি পদত্যাগ করেন এবং ছাত্র প্ল্যাটফর্মে ফিরে আসেন।
❗
সংগঠনের দুর্বলতা ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া
- অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম কার্যত স্তিমিত হয়ে পড়ে।
- নেতৃত্বহীনতা ও নাম ভাঙিয়ে অপকর্মের অভিযোগ ওঠে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে (যেমন: গুলশান চাঁদাবাজির ঘটনা, রিমান্ডে নেওয়া নেতা)।
- এই পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়।
🧑🎓
নতুন নেতৃত্বের পরিচিতি
- রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশীদ):
- জুলাই অভ্যুত্থানকালে সম্মুখ সারির সমন্বয়ক ছিলেন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
- রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও মাঠের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
- মো. ইনামুল হাসান:
- “জুলাই গণ–অভ্যুত্থান” বিষয়ক বিশেষ সেলের সম্পাদক।
- জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভ-এর প্রতিষ্ঠাতা।
🗣️
রাজনৈতিক বার্তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নতুন নেতৃত্ব ইঙ্গিত দিয়েছে—
- তারা আন্দোলনের মূল চেতনায় ফিরে যেতে চায়, যেখানে সকল দল–মতের মানুষ এক হয়েছিলেন।
- “জুলাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন” বাস্তবায়নই হবে মূল লক্ষ্য—গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার।
🧭
বিশ্লেষণ: ছাত্র রাজনীতির পুনর্জাগরণ, নাকি দ্বিধাদ্বন্দ্ব?
- একদিকে ছাত্র নেতৃত্ব আবার সংগঠিত হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়।
- অন্যদিকে, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির ছায়া এখনও পুরোপুরি সরেনি।
- এনসিপি ও ছাত্র আন্দোলনের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে “আলাদা পথচলার ইঙ্গিত” দিচ্ছে।
📌 উপসংহার:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নবগঠিত নেতৃত্ব সামনে কতটা সংগঠিত ও আদর্শিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়। তারা যদি আন্দোলনের আদর্শে দৃঢ় থাকে এবং দলগত স্বার্থের বাইরে গিয়ে জাতীয় স্বার্থে কাজ করে, তবে আবারও তারা হতে পারে একটি পরিবর্তনের মুখ