আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ মূল্যহীন: জামায়াতের ডা. তাহের
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় ঐকমত্যের আলোচনায় গৃহীত ‘জুলাই সনদ’ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, এই সনদে আইনি ভিত্তি না থাকলে তা মূল্যহীন হয়ে পড়বে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সফল করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে দুপুরের বিরতিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ডা. তাহের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমরা এত কষ্ট করলাম, আপনারা কাভার করলেন; কিন্তু বাস্তবায়ন না হলে এসবের কোনো মূল্য থাকবে না। তাই আইনি ভিত্তি ছাড়া এই চার্টারে আমরা স্বাক্ষর করব না। এই সরকারের মেয়াদেই এটি কার্যকর করতে হবে। কাল থেকেই এটা সম্ভব।”
তিনি আরও জানান, আইনি ভিত্তি না থাকলে কমিশন ও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণমূলক (কমপেনসেটরি) মামলা করা হতে পারে।
“শুধু সই করলেই চলবে না, বাস্তবায়নটাই মুখ্য। বাস্তবায়ন না হলে শপথ কিংবা ঘোষণার কোনো মানে থাকে না,” বলেন তিনি।
সংস্কার নয়, প্রহসনের আশঙ্কা
ডা. তাহের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আইনি ভিত্তি না দিলে যদি পরবর্তী সরকার এই সনদ বাস্তবায়নের পথে না এগোয়, তাহলে এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে আমরা অসমাপ্ত ও প্রহসন বলেই গণ্য করব। জাতির সঙ্গে আর কোনো তামাশা হতে দেওয়া হবে না।”
তিনি বলেন, বিগত ৫৪ বছরের নির্বাচনগুলোতে দলীয়করণ, ভোট ডাকাতি, ভুয়া ও রাতের ভোটের মতো অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে বাস্তবভিত্তিক সংস্কার দরকার।
পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নেতা বলেন, “আমরা সংসদে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির পক্ষেই ছিলাম এবং এখনো আছি। সারা বিশ্বে ৯০টির বেশি দেশে এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। গরিব-ধনী, উন্নত-অনুন্নত যাই হোক—সব মহাদেশেই এই পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবকে ‘ব্যালেন্স অব অথরিটি’ হিসেবে দেখছেন তারা।
“মূল আইন প্রণয়ন হবে নিম্নকক্ষে, আর উচ্চকক্ষ থাকবে একটি গাইডিং ও কন্ট্রোলিং বডি হিসেবে,” মন্তব্য করেন তিনি।
গণতান্ত্রিক ভিন্নমতের প্রশংসা
জুলাই সনদে বিভিন্ন দল ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) দিচ্ছে—এ বিষয়ে ডা. তাহের বলেন, “আজ আমরা যে সংখ্যক নোট অব ডিসেন্ট দেখেছি, তা আগের ২২ দিনে দেখিনি। তবুও এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। একজন না বলতেই পারেন, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই গ্রহণযোগ্যতা পায়।”
তিনি শেষ পর্যন্ত কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আইনি ভিত্তি তৈরির জন্য এখনই রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। আর তা সম্ভব বর্তমান সরকারের মেয়াদেই।”
মন্তব্য করুন