দল নয়, জীবনরক্ষাই ছিল মূল বিবেচনা”—সেনাসদরের ব্যাখ্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জে সহিংস পরিস্থিতিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের উদ্ধার করা প্রসঙ্গে সেনাবাহিনী বলেছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেয়নি—বরং জীবনহানির সম্ভাবনা বিবেচনায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকা সেনাসদরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।
তিনি বলেন, “জীবন রক্ষা করাই ছিল আমাদের মূল বিবেচনা। সেটা কোনো দলের প্রতি পক্ষপাত ছিল না। মানবিক বিবেচনায় আমরা কাজ করেছি, আগামীতেও করব।”
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী এপিসি ব্যবহার করে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষপাতিত্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন ওঠে।
এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, “আমরা কারও পরিচয় দেখে নয়, বরং যাদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়েছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও কেউ বিপন্ন হলে—দল, মত, পরিচয় না দেখে—সামরিক বাহিনী তার দায়িত্ব পালন করবে।”
তদন্ত চলছে, অবস্থান স্পষ্ট
ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
“গোপালগঞ্জের ঘটনার পেছনে কী প্রেক্ষাপট, কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলপ্রয়োগে বাধ্য হলো—তা তদন্তে বের হয়ে আসবে,” বলেন তিনি।
মেজর সাদিক বিতর্ক
সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মেজর সাদিক আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন—এমন অভিযোগ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, তদন্ত চলছে। দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য
পার্বত্য চট্টগ্রামের সহিংস পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউপিডিএফ, জেএসএসসহ স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য ও চাঁদাবাজির কারণে সংঘাত হচ্ছে। “সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, তবে বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসনেরও সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন,” বলেন তিনি।
কেএনএফ ও আরাকান আর্মি সংযোগ
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে যোগসাজশ নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন,
“তারা একই গোত্রের, এ ধরনের যোগাযোগ অস্বাভাবিক নয়। তবে কেএনএফ এখন আর কোনোভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে পারছে না।”
তিনি জানান, সেনাবাহিনীর অভিযানে কেএনএফের অস্ত্র, ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করা হয়েছে।
“তাদের কর্মকাণ্ড অনেকাংশে কমে গেছে, আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সম্মিলিত উদ্যোগ থাকলে কেএনএফকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব,” মন্তব্য করেন তিনি।
মন্তব্য করুন