ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ স্বীকার করলেন নুরুল হক নুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এই সেমিনারে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মেন্দি সাফাদির সঙ্গে নুরের সাক্ষাতের প্রসঙ্গ তোলেন। তার বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়ায় নুর বলেন,
“স্যার (কলিমুল্লাহ) একটু বাড়িয়ে বলছেন, যা বিভ্রান্তি তৈরি করবে। আমি বিদেশ সফরে অনেকের সঙ্গে দেখা করি, এটা হতেই পারে। তবে সেটি কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল না—একটি কফিশপে দাঁড়িয়ে কেবল একটি ছবি তোলা হয়েছিল। কফি-টফি, মিটিং-টিটিং কিছুই হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি তখন অনেক বিড়ম্বনায় ছিলাম। অনেক ধকল গেছে। ঘটনা আজ থেকে দুই বছর আগের।”
অতীত বিতর্ক ও প্রেক্ষাপট
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালে কাতারে সফরের সময় মেন্দি সাফাদির সঙ্গে নুরুল হকের বৈঠকের গুঞ্জন উঠেছিল। নুর তখন বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার বলে দাবি করলেও মেন্দি সাফাদি নিজেই সাক্ষাতের বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টি নুরুল হকের ওপর বিশেষভাবে কেন্দ্রীভূত হয় এবং পরবর্তীতে তিনি রাজনৈতিকভাবে খানিকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
কলিমুল্লাহর বক্তব্য ও ধর্মীয় পরিচয় বিতর্ক
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক কলিমুল্লাহ বলেন,
“ইসরায়েলের নাগরিক মেন্দি সাফাদি একজন দ্রুজ মুসলিম। তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের সঙ্গে একটি কফি মিটিংয়ে মিলিত হয়েছিলেন। এই ঘটনার জেরে নুরকে রাজনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়তে হয়। আমি তাকে উদ্ধার করতে সহযোগিতা করি।”
তবে সেমিনারের সঞ্চালক জিল্লুর রহমান এই বক্তব্য সংশোধন করে বলেন,
“দ্রুজ ধর্ম একটি আলাদা ধর্ম; এটি সরাসরি ইসলামের অংশ নয়।”
ইসরায়েল ও বাংলাদেশ: অতীত সংযোগ
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মুশতাক আহমেদের সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রাথমিক উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন কলিমুল্লাহ।
তিনি বলেন,
“১৯৭২ সালে ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিল। তবে ভারতসহ আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সেই সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।”
সাফাদির অতীত ও বাংলাদেশের আগ্রহ
মেন্দি এন সাফাদির নাম আলোচনায় আসে ২০১৬ সালে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের ঘটনায়। এরপর আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়। সাফাদি তখন থেকে নানা রাজনৈতিক গুঞ্জনের কেন্দ্রে ছিলেন।
সাফাদি ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সদস্য এবং একসময় দেশটির প্রভাবশালী দ্রুজ নেতা আয়ুব কারারের প্রধান সহকারী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ‘সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, যেটি বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার দাবি করে।
তবে তার প্রকৃত কার্যক্রম এবং অর্থায়ন নিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন। বাংলাদেশেও তার সংযোগ ছিল শিপন কুমার বসু নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে, যাকে পরে সাফাদি নিজেই ‘প্রতারক’ আখ্যা দেন।
সরকারি নীতির দ্বিধা ও জনগণের কৌতূহল
বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে ২০২১ সালে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল ভ্রমণ নিষিদ্ধ’ সংক্রান্ত শব্দ তুলে নেওয়া হয়, যা বিতর্ক তৈরি করে।
তাছাড়া ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ দাবি করে, বাংলাদেশ সরকার একটি ইসরায়েলি প্রযুক্তি কোম্পানি থেকে নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছে। যদিও সরকার এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি।
নুরের অবস্থান
সামগ্রিক প্রসঙ্গে নুরুল হক নুর বলেন,
“আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের দল ভাঙার উদ্দেশ্যে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বাস্তবতা বিকৃত করে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।”
মন্তব্য করুন