সাংবাদিকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও গ্রেপ্তারের হুমকি, ওসি আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ জুলাই ২০২৫
রংপুরের গঙ্গাচড়া হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুই সাংবাদিকের সঙ্গে অশালীন ও হুমকিস্বরূপ আচরণের অভিযোগ উঠেছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জ থানা চত্বরে অবস্থিত গোলঘরে। অভিযোগকারী দুই সাংবাদিক হলেন– কালবেলা পত্রিকার রংপুর প্রতিনিধি রেজওয়ান রনি এবং প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান।
ঘটনা শুরু অনুসন্ধান থেকে
সাংবাদিকরা জানান, হামলার ঘটনাটি কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষা হওয়ায় তাঁরা ঘটনার বিস্তারিত জানতে থানায় যান। স্থানীয়দের সূত্রে তারা জানতে পারেন, হামলার দিন সকাল থেকেই কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়, যা দুপুরে সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে বিক্ষোভে রূপ নেয়।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে ওসির ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
থানার গোলঘরে ওসি আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আলাপের সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, বিক্ষোভের দিন কতজন পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলেন। এ নিয়ে ওসি প্রথমে দ্বিধান্বিত প্রতিক্রিয়া দেন এবং পরবর্তীতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন,
“উসকানি দিতে আসছে ওরা। সাংবাদিকেরা এগুলো করছে। রাজনীতিকরাও করতে পারে। শুধু শুধু পুলিশকে দোষ দিলে হবে না।”
ওসি আরও বলেন, “আপনাদের যোগ্যতা থাকলে ভালো জায়গায় কিছু করতেন, এভাবে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতেন না।” একপর্যায়ে তিনি উচ্চস্বরে বলেন, “এই এদের ধরেন তো!” এবং উপস্থিত উপপরিদর্শক মহসিনকে নির্দেশ দেন সাংবাদিকদের আটক করতে।
এসআই মহসিন পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করে দুই সাংবাদিককে থানা চত্বর থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেন।
সাংবাদিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে)। সংগঠনের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন,
“পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের গালিগালাজ ও গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার শামিল।”
তিনি আরও বলেন, “ওসি আশরাফুল ইসলামের আচরণ বর্তমান ফ্যাসিবাদী দমননীতির প্রতিচ্ছবি। তাকে দ্রুত প্রত্যাহার করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ আন্দোলনে নামবে।”
পুলিশের অবস্থান
এ বিষয়ে জানতে নীলফামারীর পুলিশ সুপার এএফএম তারিক হাসান খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো প্রশ্নেরও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, সাংবাদিক ইউনিয়নের দাবি–এ ঘটনার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও পেশাগত শিষ্টাচার নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তারা দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন