জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গোলাবারুদের হিসাব, আন্দোলনের পরিকল্পনায় মুখ্য ছিলেন প্রশাসনের একাংশ: উপসচিব এনকেবির ফেসবুক পোস্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ জুলাই ২০২৫
২০২৫ সালের ‘জুলাই আন্দোলন’ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধ্যায় হয়ে উঠেছে। এ আন্দোলনে যখন দেশজুড়ে উত্তাল জনতা, একের পর এক প্রাণ ঝরছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে, তখন আন্দোলনের দিকনির্দেশনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে একদল নির্ভিক সমন্বয়কারী। এই সমন্বয়কারীদের কেউ কেউ সরাসরি প্রশাসনের ভেতরে থেকেও আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেছেন বলে এবার ফাঁস হয়েছে।
সম্প্রতি উপসচিব নূরুল করিম ভূঁইয়া (এনকেবি) তার ফেসবুক পোস্টে সে সময়কার কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন।
তিনি লেখেন—“জুলাই মাসের আন্দোলন আর তাতে অংশ নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নিয়ে নানা ক্যারিকেচার এখন শুনতে পাই। ইতিহাস বিকৃতির এই সময়েও আমরা জানি, একদিন প্রকৃত ইতিহাস অবশ্যই লেখা হবে। আজ সেই ইতিহাসের একটি ক্ষুদ্র অংশ আপনাদের জানাতে চাই।”
ধানমন্ডির বৈঠক ও অস্ত্রের হিসাব
নূরুল করিম জানান, ২০২৪ সালের ২৮ জুলাই ধানমন্ডির একটি গোপন বৈঠকে পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুত নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্বয়ং নূরুল করিম ভূঁইয়া।
বৈঠকে যেসব তথ্য উঠে আসে, তার ভিত্তিতে আন্দোলনের মূল পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। বিশেষ করে ৬ আগস্ট ঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এগিয়ে আনা হয় ৫ আগস্টে। ঠিক সেই দিনেই সরকার পতনের ঘোষণা আসে।
তথ্য বিশ্লেষণই বদলে দেয় কৌশল
সেই সময় আন্দোলনের পেছনে থাকা কৌশলকারীরা মাঠ পর্যায়ে থাকা পুলিশ ফোর্সের অস্ত্রভাণ্ডার এবং ব্যয়যোগ্য গোলাবারুদ বিশ্লেষণ করেন। উদাহরণ হিসেবে কদমতলী থানার গোলাবারুদ ব্যয়, বাকি থাকা রিজার্ভ, এবং নতুন সরবরাহ পৌঁছাতে কত সময় লাগবে—এসব নিয়েই তৈরি করা হয় একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট।
এই তথ্য গোপনে পৌঁছে দেওয়া হয় আন্দোলনের ‘ডিরেকশন টিম’-এর হাতে। এর ভিত্তিতেই পরবর্তী আন্দোলনের সময়সীমা এবং কৌশল নির্ধারণ করা হয়।
কিছু প্রশ্ন, কিছু প্রতিক্রিয়া
নূরুল করিম তার পোস্টে লেখেন—“জানেন কি, কেন আন্দোলনের তারিখ একদিন এগিয়ে আনা হয়েছিল? জানেন কি, কীভাবে পুলিশের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাবে এই ধারণা থেকে বিজয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল?”
তিনি অভিযোগ করেন, অনেক তথাকথিত ‘জুলাই যোদ্ধা’ আজ ইতিহাস বিকৃত করছেন। শুধুমাত্র বিজয়ের পর তোলা ছবি নিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করছেন, অথচ প্রকৃত কৌশলের কিছুই জানেন না।
ঐ পোস্টে তুলে ধরা হয় আরও কিছু চাঞ্চল্যকর প্রশ্ন:
সবশেষে তিনি লেখেন, “একদিন সব লেখা হবে। ইতিহাস বিকৃতির বাজারে যারা ছবি দেখিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছেন, তারা যেন নিজেদের আয়নায় একবার মুখ দেখেন।”
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
এই প্রতিবেদনটি একটি প্রশাসনিক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি। এতে ব্যক্তিগত মতামত ও ইতিহাসের একটি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপিত হয়েছে, যা কোনো পক্ষের আনুষ্ঠানিক অবস্থান হিসেবে বিবেচ্য নয়।
মন্তব্য করুন