রাশিয়ায় ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প: ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী, প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে সুনামি সতর্কতা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ●
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কামচাটকা উপদ্বীপে আঘাত হেনেছে ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। স্থানীয় সময় বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টায় ৮.৮ মাত্রার এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এটি আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই ভূমিকম্পের পর হাওয়াই, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, নিউজিল্যান্ডসহ একাধিক দ্বীপপুঞ্জের জন্য সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সুনামির ঢেউ রাশিয়ার কুরিল দ্বীপপুঞ্জ, জাপানের হোক্কাইডো এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে পৌঁছায়। আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের উপকূলেও ছোট ছোট ঢেউ লক্ষ্য করা গেছে।
তীব্রতার দিক থেকে এটি ২০১১ সালের জাপানের তোহোকু ভূমিকম্পের পর সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রাথমিকভাবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ ভূমিকম্প
ভূতাত্ত্বিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়ার এই ভূমিকম্পটি পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড করা ষষ্ঠ শক্তিশালী ভূমিকম্প। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS)-এর তালিকায় শীর্ষ ১০ ভূমিকম্পের তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো:
১. ভালদিভিয়া, চিলি (১৯৬০) — ৯.৫ মাত্রা
‘গ্রেট চিলিয়ান ভূমিকম্প’ নামে পরিচিত। প্রায় ১ হাজার ৬৫৫ জনের প্রাণহানি হয়। সৃষ্ট সুনামি হাওয়াই, জাপান ও ফিলিপিন্স পর্যন্ত আঘাত হানে।
২. প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড, আলাস্কা (১৯৬৪) — ৯.২ মাত্রা
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। সুনামির কারণে ১৩৯ জনের মৃত্যু হয়।
৩. সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া (২০০৪) — ৯.১ মাত্রা
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভয়াবহ সুনামির সৃষ্টি করে। প্রাণহানি ঘটে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের।
৪. তোহোকু, জাপান (২০১১) — ৯.১ মাত্রা
১৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু। ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
৫. কামচাটকা, রাশিয়া (১৯৫২) — ৯.০ মাত্রা
৫০ ফুট উঁচু সুনামির ঢেউয়ে ভেসে যায় জনপদ। প্রায় ১০-১৫ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়।
৬. ইকুয়েডর-কলম্বিয়া (১৯০৬) — ৮.৮ মাত্রা
দুই দেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি ঘটে। প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা যায়।
৭. বায়োবিও, চিলি (২০১০) — ৮.৮ মাত্রা
চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় তাণ্ডব চালায়। ৫০০ জনেরও বেশি প্রাণ হারান।
৮. এসমেরালডাস, ইকুয়েডর (১৯০৬) — ৮.৮ মাত্রা
প্রচণ্ড ভূকম্পনের পাশাপাশি সুনামির সৃষ্টি হয়। প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়।
৯. র্যাট আইল্যান্ড, আলাস্কা (১৯৬৫) — ৮.৭ মাত্রা
সৃষ্ট সুনামিতে বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিমানবন্দর ও অবকাঠামোতে ফাটল দেখা দেয়।
১০. তিব্বত, চীন (১৯৫০) — ৮.৬ মাত্রা
৭৮০ জনের প্রাণহানি ও বহু গ্রাম ধ্বংস হয়। নদী অবরুদ্ধ হয়ে পরে বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সময়মতো সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে আরও উন্নত পূর্বাভাস এবং দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ইউরোনিউজ, ইউএসজিএস
মন্তব্য করুন