স্টাফ রিপোর্টার
নিউ ইয়র্ক ● ২৯ জুলাই ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম (৩৬)-কে ‘হিরো’ বা নায়ক হিসেবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সেখানকার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। নিজের কর্তব্য পালন করতে গিয়েই নায়কোচিত মৃত্যু বরণ করেন তিনি।
হামলার সময় পার্ক অ্যাভিনিউর একটি বহুতল ভবনের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন দিদারুল ইসলাম। ঠিক তখনই এক সন্দেহভাজন বন্দুকধারী শেন তামুরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এই সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে, এরপর দায়িত্বশীল এক জীবন
দিদারুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী একজন পরিশ্রমী ও কর্তব্যপরায়ণ মানুষ। তিনি নিউ ইয়র্ক পুলিশের একজন দায়িত্বশীল অফিসার হিসেবে কাজ করতেন। তার দুই সন্তান রয়েছে, আর তৃতীয় সন্তানটি স্ত্রী গর্ভবতী অবস্থায় ধারণ করছেন—এমন এক সময়ে ঘটল এই মর্মান্তিক ঘটনা।
‘তিনি আমাদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন’ — মেয়র এরিক অ্যাডামস
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস দিদারুল ইসলামকে স্মরণ করে বলেন,
“মানুষের জীবন রক্ষার যে কাজ তিনি করতেন, সেটি করতে গিয়েই তিনি শহীদ হলেন। তিনি নিউ ইয়র্কবাসীকে রক্ষা করেছেন। তিনি সত্যিকারের একজন হিরো।”
হামলার পেছনে মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত
হামলার ঘটনায় একজন নারী ব্যাংক কর্মকর্তা ও দুইজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। আরেকজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে শেন তামুরা নিজেই নিজের গায়ে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানায় পুলিশ।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলাকারীর ফেলে যাওয়া একটি চিরকুট থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি মস্তিষ্কে আঘাতের অভিযোগে এনএফএল (ন্যাশনাল ফুটবল লীগ)-এর সদর দপ্তরে হামলা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভুলবশত অন্য ভবনে প্রবেশ করেন এবং সেখানে এই হত্যাযজ্ঞ চালান।
হামলাকারী ছিলেন সাবেক ফুটবল খেলোয়াড়
মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শেন তামুরা অল্প বয়সে ফুটবল খেললেও কখনো এনএফএলে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে নাম লেখাননি। তার মানসিক ভারসাম্যহীনতা ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে।
দিদারুল ইসলামের মৃত্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া
এই ঘটনার পর নিউ ইয়র্কসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দিদারুল ইসলাম শুধু একজন সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা নন, ছিলেন প্রতিশ্রুতিশীল অভিবাসীর এক প্রতীক, যিনি নিজের পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগ দিয়ে অনেকের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিলেন।
মন্তব্য করুন