চাঁদপুরে ইলিশের আকাশছোঁয়া দাম, মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ‘সোনার হরিণ’
স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর ● ২৯ জুলাই ২০২৫
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ একলাশপুর বাবুবাজার মৎস্য আড়তে এখন ইলিশ যেন ‘সোনার হরিণ’। নদীতে ইলিশের দেখা না মেলায় আড়তগুলোতেও সরবরাহ কম। ফলে যা পাওয়া যাচ্ছে, তাও বিক্রি হচ্ছে সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকা দরে। মাঝারি আকারের (৬০০–৭০০ গ্রাম) ইলিশ প্রতি কেজি ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। বিপরীতে, ৫ কেজি ওজনের বড় পাঙ্গাস মাছের দাম কেজি প্রতি ১০০০–১১০০ টাকা।
ক্রেতা হোসেন আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“প্রতিবার এ মৌসুমে ইলিশ কিনে খেতাম। এখন তো সেটা স্বপ্ন হয়ে গেছে। এক কেজি ইলিশ কিনতে গেলে দুই হাজার টাকা লাগে। এত দাম দিয়ে এখন এক মণ চাল কেনা যায়!”
জেলে টিটু বর্মণ বলেন,
“নদীতে আগের মতো মাছ নেই। সারারাত জাল ফেলে একটাও ইলিশ পাই না। তেল, বরফ, নৌকা—সব খরচ নিজের ঘাড়ে, অথচ লোকসান গুনতে হচ্ছে।”
আরেক জেলে আল আমিন বলেন,
“জীবন ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামলেও জাল খালি উঠে। বর্ষার সময় মাছ থাকার কথা, এবার জালেও নেই, পানিতেও নেই।”
মৎস্য আড়তদার দেলু বেপারী বলেন,
“এখন মাছের প্রজননকাল। তাই নদীতে কম পাওয়া যাচ্ছে। আমরা চাইলেও কম দামে বিক্রি করতে পারি না। কারণ কিনতেই হচ্ছে বেশি দামে।”
আড়তদার সিরাজ মোল্লার মতে,
“পরিবহন খরচ, বরফের দাম সব কিছু বাড়ায় বাজারে ইলিশের দামও বাড়ছে। আগস্টে যদি মাছের সরবরাহ বাড়ে, তাহলে হয়তো দাম কিছুটা কমবে।”
বাবুবাজারের সরদার রাজিব খান জানান,
“আবহাওয়া ভালো থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে মাছ উঠতে পারে। তখন দামও সহনীয় হবে। তবে সরকারিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ জরুরি।”
স্থানীয় গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন,
“ইলিশ ছাড়া উৎসব পূর্ণ হয় না। কিন্তু এখন তো মনে হয় ইলিশ শুধুই ধনীদের খাবার!”
ক্রেতা লিয়াকত হোসাইন রাফেদ বলেন,
“বাজারে এসেছিলাম ইলিশ কিনতে। দাম শুনে মাথা ঘুরে গেল। বাধ্য হয়ে রুই-কাতলা কিনে চলে যাচ্ছি।”
এদিকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিস্থিতি সাময়িক। কয়েক দিনের মধ্যেই নদীতে মাছ উঠলে দাম সহনীয় হবে।
প্রশাসনের নজরদারির দাবি
স্থানীয়রা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সক্রিয় নজরদারি ও ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বাজারে যেন সিন্ডিকেট বা অসাধু মুনাফাখোরদের দৌরাত্ম্য না চলে, সে বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন সবাই।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন,
“নদীর পানির মান খারাপ, নিষিদ্ধ উপকরণ ব্যবহারের পাশাপাশি পরিকল্পনাহীন নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,
“এখন বর্ষাকাল, এটি ইলিশের মৌসুম। কয়েক দিনের মধ্যেই নদীতে মাছের সরবরাহ বাড়বে এবং জেলেরা আবারও মাছ ধরতে পারবেন।”
মন্তব্য করুন