“জুলাই সনদের খসড়া দুর্বল, শেখ হাসিনার নাম না থাকা মেনে নেওয়া যায় না” — ইসলামী আন্দোলন
স্টাফ রিপোর্টার:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেছেন, খসড়া জুলাই সনদ পড়ে এটিকে “পতিত স্বৈরাচারের প্রতি নমনীয় ও আইনি বাধ্যবাধকতাহীন দুর্বল সনদ” বলেই মনে হয়েছে। তিনি বলেন, সনদের খসড়ায় একবারও ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের মূল হোতা শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ না করাটা বাস্তবতাকে অস্বীকার করার শামিল।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে ইসলামী আন্দোলনের নিয়মিত কেন্দ্রীয় বৈঠকে মাওলানা ইউনুস আহমদ এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “পুরো ফ্যাসিবাদী শাসন শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক প্রকাশিত ফোনালাপেও তার সরাসরি হত্যার নির্দেশের প্রমাণ মেলে। তারপরও খসড়া সনদে তার নাম না থাকাটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”
খসড়া সনদকে ‘গৎবাঁধা ও অস্পষ্ট’ বললেন মহাসচিব
মাওলানা ইউনুস বলেন, “সনদে ‘পতিত ফ্যাসিবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও, তার নির্মমতা, বিভীষিকা এবং দীর্ঘকালীন দুঃশাসনের চিত্র উপস্থাপন করা হয়নি। এটি যেন কেবল একটি শৈথিল্যপূর্ণ বিবৃতি মাত্র।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদের প্রধান দাবি ছিল আইনি বৈধতা ও সুরক্ষা। কিন্তু খসড়ায় এর কোনো উল্লেখ নেই। ‘অঙ্গীকারনামা-৭’-এ ‘যথাযোগ্য স্বীকৃতি’ বলেও যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি আপেক্ষিক ও ব্যাখ্যাযোগ্য—যে যার মতো করে এর তাৎপর্য নির্ধারণ করবে। অথচ জুলাইয়ের ঘটনাবলির তাৎপর্য রক্তাক্ত বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে, কোনো আপেক্ষিকতার নয়।”
“আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা উপেক্ষিত”
সাবেক আন্দোলনকারীদের মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিয়েও খসড়া সনদে কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মাওলানা ইউনুস আহমদ। তিনি বলেন, “যারা জীবন বাজি রেখে এই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছে, তাদের আইনি সুরক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সনদের খসড়া। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অবদান বা অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর নামও সেখানে নেই।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত না করে এই সনদ রাজনীতিতে তাদের পুনর্বাসনের পথ সুগম করে দিতে পারে।”
ভারতের ভূমিকা ও সনদের নীরবতা
মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, “বাংলাদেশ যে দেড় দশক ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তায় শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে, সেটি আজ আর কারো অজানা নয়। কিন্তু খসড়া সনদে ভারতের ভূমিকা নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। এই নীরবতা রহস্যজনক।”
তিনি অভিযোগ করেন, “সনদটির খসড়া রচনায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবেই ফ্যাসিবাদী অপশক্তিকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাইয়ুম, দপ্তর সম্পাদক লোকমান হোসেন জাফরী, এবং কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম জাকারিয়া, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, আব্দুর রহমান, প্রকৌশলী আতিকুর রহমান মুজাহিদ, মুহাম্মদ মকবুল হোসাইন, মুফতি দেলাওয়ার হোসেন সাকী, মুফতি শেখ মুহাম্মদ নুরুন্নবী, এম হাছিবুল ইসলাম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মুফতি মানসুর আহমাদ সাকী ও মুফতি রেজাউল করীম আববার।
মন্তব্য করুন