চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার রাজ্জাকের গ্রামের বাড়িতে পাকা ভবন নির্মাণ, এলাকায় আলোচনার ঝড়
“ঋণ আর অনুদানে ঘর বানাচ্ছি” বলছেন মা, তবে এলাকাবাসীর সন্দেহ অন্যখানে
নিজস্ব প্রতিবেদক
সেনবাগ, নোয়াখালী | ২৮ জুলাই
রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদের নোয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে নির্মাণাধীন একতলা পাকা ভবন ঘিরে চলছে জোর আলোচনা। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে বেড়ে ওঠা এক ছাত্রের হঠাৎ ভবন নির্মাণ স্থানীয়দের কৌতূহল ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সেনবাগ উপজেলার নবীপুর গ্রামে রাজ্জাকের পুরোনো টিনের ঘর ভেঙে গত দুই-আড়াই মাস আগে শুরু হয় ভবন নির্মাণ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দক্ষিণ পাশে চাচা জসিম উদ্দিনের জরাজীর্ণ টিনের ঘর আর পশ্চিম পাশে আরেক চাচার বাড়ি। জসিম উদ্দিন বলেন, “পুরোনো টিনের ঘরের জায়গায় এখন পাকা ঘর উঠছে। আগে এমন কিছু দেখিনি।”
পরিবারের ভাষ্য: “জমানো টাকা, ঋণ আর অনুদানে ঘর”
রাজ্জাকের মা রেজিয়া বেগম জানান, “ঘরের কাজ হচ্ছে বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে। স্বামীর জমানো টাকাও আছে। গত বছরের বন্যায় ঘর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরকার থেকে চার বান্ডিল টিন পাইছি, সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। আল-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে ৫০ হাজার টাকাও পেয়েছি, সব মিলিয়ে ঘরের পেছনে খরচ করছি।”
তবে ঋণ নেওয়ার কাগজপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিয়া বেগম কিছুই দেখাতে পারেননি। তাঁর দাবি, “রাজ্জাক তো নিজেই কষ্ট করে চলে, উল্টো ওকেই প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে হয়। সে টিউশনি করে, আত্মীয়স্বজনের সাহায্য নেয়।”
প্রতিবেশীদের সন্দেহ
তবে এলাকাবাসীর একাংশ বলছে, “বছরখানেক আগেও টিনের চালা ঘরে যাদের বসবাস, তারা এত দ্রুত পাকা ঘর তুলছে কীভাবে?” অনেকে ধারণা করছেন, ঢাকায় রাজ্জাকের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই এই উন্নয়ন ঘটেছে।
রাজ্জাকের এক চাচি বলেন, “তার বাবা ও ভাই দুজনই রিকশা চালাত। এখন আর চালান না। আগেও এমন ঘর করার সামর্থ্য ছিল বলে মনে হয় না।”
রাজনৈতিক পরিচিতি ও গ্রেপ্তার
রাজ্জাক ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এক সময় টিউশনি করে চললেও পরবর্তীতে তিনি ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। গত ফেব্রুয়ারিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ আহ্বায়ক হিসেবে যুক্ত ছিলেন এবং পরে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য হন।
গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও তিনজন—ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না এবং ভাই সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। এ ঘটনায় চারজনকেই সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত এবং সংগঠন থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
সহপাঠীর প্রতিক্রিয়া
রাজ্জাকের সহপাঠী কোরবান আলী হৃদয় জানান, “মাধ্যমিক পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছি। পরে শুনেছি ঢাকায় ভর্তি হয়েছে। রাজনীতি করত, শুনেছি সমন্বয়কও হয়েছে। কিন্তু চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তারের খবরে আমরা সবাই হতবাক।”
মন্তব্য করুন