যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক কমানোতে ‘কূটনৈতিক সাফল্য’ দাবি, কিন্তু বাংলাদেশ কী বিনিময়ে দিয়েছে?
স্টাফ রিপোর্টার | ১ আগস্ট ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্কের হার তৃতীয় দফা আলোচনায় ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। এই সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক কূটনৈতিক সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অর্থনীতিবিদদের অনেকে একে ইতিবাচক পরিবর্তন বললেও—এই অর্জনের বিনিময়ে বাংলাদেশকে কী কী ছাড় দিতে হয়েছে, তা নিয়ে এখনো রয়েছে ধোঁয়াশা।
🇧🇩
কূটনৈতিক সাফল্য, নাকি গোপন সমঝোতা?
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই চুক্তিকে “সুস্পষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য” বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিন দফা আলোচনার এই প্রক্রিয়ায় কোনো গোপন চুক্তি হয়েছে কি না, কিংবা বাংলাদেশ বিনিময়ে কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা হচ্ছে, কূটনৈতিক লাভের আড়ালে হয়তো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু স্পর্শকাতর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যেগুলো এখনো স্পষ্ট নয়।
📉
শুল্ক কমলেও চ্যালেঞ্জ কমেনি
শুল্ক হার কমে ২০ শতাংশে নামলেও এর আগে থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড় ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিলই। ফলে নতুন করে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন,
“আগে ৫০ শতাংশ দিতে হতো, এখন সেটি কমে এসেছে। এটি অবশ্যই স্বস্তির বিষয়। তবে চ্যালেঞ্জ একেবারে চলে যায়নি।”
কী কী চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে?
🇮🇳
প্রতিযোগীদের মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে, তবে শর্ত জুড়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এতে করে বাংলাদেশ এখন আরও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্র কেবল বাণিজ্য নয়, বরং ভূ-রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকেও এই শুল্ক কাঠামো সাজিয়েছে।
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন,
“যারা আগে প্রতিযোগী ছিল, তারাই এখনও প্রতিযোগী। তবে চীনের মার্কেট আমরা পাচ্ছি—এটি এখন আমাদের জন্য বড় সুযোগ।”
💱
বিনিময়ে কী প্রতিশ্রুতি দিল বাংলাদেশ?
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যেমন:
তবে এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন,
“বিনিয়োগ, অশুল্ক বাধা কিংবা কৌশলগত পণ্য সংক্রান্ত কোনো চুক্তি হয়ে থাকলে, সেটি জনসমক্ষে আনা প্রয়োজন। কারণ বাণিজ্য ও কূটনীতি এক দেশের ওপর নির্ভর করে চলে না।”
🚢
ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফ: একটি অদৃশ্য শুল্কের ফাঁদ?
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল অনেকাংশেই চীন থেকে আসে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফ হিসেবে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারে যদি পণ্যের উৎস চীন হয়।
এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
📌
চুক্তি প্রকাশের দাবি
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন—
🔍 চুক্তির শর্তাবলি কী? বাংলাদেশ কিসে সম্মত হয়েছে?
এ বিষয়ে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন,
“এই চুক্তিতে যদি অন্য বাণিজ্য অংশীদারদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেটি জাতির জন্য হুমকি হতে পারে। তাই পূর্ণাঙ্গ চুক্তি প্রকাশ করা জরুরি।”
✅
শেষ কথা
শুল্ক কমানো নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এর পেছনের শর্তগুলো স্বচ্ছ না হলে ভবিষ্যতে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। কূটনৈতিক সাফল্যের পাশাপাশি গোপন চুক্তির বাস্তবতা, বাণিজ্যিক চাপ এবং প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলাদেশের প্রস্তুতি—এই সবদিকেই এখন নজর দেওয়া জরুরি।
মন্তব্য করুন