টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সীমান্ত পর্যটনস্পটে হাউসবোটে চলছে বিদেশি মদ বিক্রি, বিপাকে চালকরা
প্রকাশিত: ১ আগস্ট ২০২৫ | নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী লেক ও জাদুকাটা নদীর পাড়ে হাউসবোটে চলছে প্রকাশ্যে বিদেশি মদ বিক্রি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, এই বেআইনি কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে ১০-১২ বছরের কিশোরদের। এতে বিপাকে পড়েছেন হাউসবোট মালিক ও চালকরা।
পর্যটন স্বর্গে মদের দৌরাত্ম্য
প্রতিদিন হাজারো পর্যটক টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ঘুরতে যান। এসব পর্যটকবাহী হাউসবোট সাধারণত সুনামগঞ্জ জেলা শহর বা তাহিরপুর সদর থেকে যাত্রা করে টাঙ্গুয়ার হাওর হয়ে নিলাদ্রী লেক ও শেষ দিনে জাদুকাটা নদীতে পৌঁছায়।
হাউসবোট কোনো পর্যটন ঘাটে পৌঁছা মাত্রই নৌকায় করে কয়েকজন শিশু উঠে পড়ে। তারা বোতলভর্তি বিদেশি মদ নিয়ে হাউসবোটে এসে সরাসরি পর্যটকদের কাছে জানতে চায়— “মাল লাগবে? যেকোনো ব্র্যান্ড দিতে পারব।”
চক্ষু খুলে দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে লাউড়েরগড় পাড়ে এমন ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন এক পর্যটকবাহী হাউসবোটের ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন শাওন। তিনি জানান,
“হাউসবোটটি নদীর পাড়ে পৌঁছার পরপরই কয়েকজন ১০-১২ বছর বয়সী ছেলে হঠাৎ উঠে পড়ে। তাদের কাছে ছিল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদের বোতল। পর্যটকদের উদ্দেশ্যে তারা বলে, ‘লাল পানি লাগবে?’ আমি ছবি তুলতেই তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।”
চালক ও মালিকদের উদ্বেগ
হাউসবোট ‘তরঙ্গ বিলাশ’–এর চালক জানে আলম বলেন,
“আমরা মদ বিক্রি করি না, তবুও এসব ছেলেপেলেরা এসে হাউসবোটের গায়ে লেগে থাকে। বলে—‘মামা লাল পানি লাগবে? দিয়া দিব।’ এতে আমাদের পর্যটকদের সামনে বিব্রত হতে হয়।”
তিনি আরও জানান, শুধু টাঙ্গুয়ার হাওর নয়, বারেকটিলা, শিমুল বাগান, লাউড়েরগড়— সব জায়গায় একই অবস্থা। স্থানীয় কিছু অসাধু চক্র এই কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে।
সংগঠনের উদ্বেগ
তাহিরপুর নৌ-পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ রব্বানী বলেন,
“মাদক এখন এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে হাউসবোটগুলো মাদকচক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। আগে বড়রা বিক্রি করত, এখন ছোট ছোট ছেলেরা নিয়ে আসছে। এতে পর্যটনের পরিবেশ ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
পুলিশের হুঁশিয়ারি
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন,
“পর্যটন এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্টের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সেবনকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযান চলছে, চলবে।”
সম্পাদকীয় মন্তব্য
টাঙ্গুয়ার হাওর ও এর আশপাশের এলাকাগুলো দেশের অন্যতম জনপ্রিয় প্রাকৃতিক পর্যটন গন্তব্য। এই এলাকার পরিবেশ, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং পর্যটনের ইতিবাচক ইমেজ রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, স্থানীয়দের সচেতনতা ও পর্যটকদের সচেতনতাই পারে এই অপরাধ বন্ধ করতে।
মন্তব্য করুন