ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর কেটেছে এক বছর। এই সময়ের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিলক্ষিত হচ্ছে নতুন মতপার্থক্য ও জোটের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন। যেসব রাজনৈতিক দল একত্রে আন্দোলনে যুক্ত ছিল, তাদের মধ্যেই এখন নির্বাচন, সংস্কার ও সরকার গঠন নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচন জিতলে একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন করবে। তিনি বলেন, “যারা আমাদের আন্দোলনে শরিক ছিল এবং সংস্কার-চেতনায় একমত, তাদের নিয়েই এ সরকার হবে।”
বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতামত
ফখরুলের মতে, বিএনপি এখন দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। বামপন্থীরা তেমন সক্রিয় নয়, তবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কিছুটা সক্রিয়তা দেখাচ্ছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে তিনি মন্তব্য করেন, দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত ভঙ্গুর এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির কারণে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে।
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই
তিনি বলেন, “নির্বাচন ঘিরে এখন আর তেমন কোনো শঙ্কা নেই। অন্তর্বর্তী সরকার গ্রহণযোগ্যভাবে নির্বাচন আয়োজন করছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আমরা আর কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না।”
সংস্কার এবং ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা বদল নয়, বরং রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার। যারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরাই তো আগে সংস্কারের কথা বলেছি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন
তিনি সরকারের ১১ মাসের কাজকে “অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক” বলে মন্তব্য করেন। বিশেষ করে প্রশাসনিক সংস্কার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকটি প্রশংসা করেন।
আওয়ামী লীগের বিচার দাবি
ফখরুল বলেন, “গণহত্যা ও লুটপাটের দায়ে আওয়ামী লীগের প্রত্যেক জবাবদিহির আওতায় আসা উচিত। দল হিসেবে তারা ক্ষতির কারণ হয়ে থাকলে, তাদের বিচার হওয়া উচিত।”
রাজনীতিতে ডানপন্থিদের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ
তিনি বলেন, “ডানপন্থি মৌলবাদী শক্তির উত্থান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসব শক্তি নারীকে রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষমতায়নে আগ্রহী নয়। এটা জাতির জন্য পিছিয়ে পড়ার সংকেত।”
উগ্রবাদ ও বিভক্তির জন্য দায়ী কে?
তিনি সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করেন। বিএনপিকে দমন করার ফলে ডানপন্থিদের উত্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।
শেষ কথা
শেষে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকে সম্মান করুন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হতে দিন, আর আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।”
মন্তব্য করুন