যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি আজ থেকে কার্যকর হওয়ায় বৈশ্বিক বাণিজ্যজগতে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ। বিভিন্ন দেশের ওপর একচেটিয়া হারে শুল্ক আরোপ করায় অনেক দেশেই রপ্তানি খাতে দেখা দিয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ। একইসঙ্গে, বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ওয়াশিংটন ঘোষিত নতুন হার অনুযায়ী, সিরিয়ার ওপর সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, আর বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য এই হার তুলনামূলক কম—মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
এই সিদ্ধান্তে চীন, ভারত, জাপানসহ বহু দেশের ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বলছে, নতুন শুল্কের ফলে রপ্তানি খরচ বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে ভোক্তামূল্যেও।
ভারতের এক শিল্পপতি বলেন, “এই শুল্ক কম হলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ বা ভিয়েতনামের সাথে প্রতিযোগিতায় সুবিধা পেতাম।” জাপানের এক রপ্তানিকারক জানান, “১৫ শতাংশ শুল্ক জাপানের মতো দেশের জন্যও অস্বস্তিকর। এতে আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।”
লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপে বাধ্য হবে। ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা আমেরিকার প্রতি উদার ছিলাম, কিন্তু এখন নিজেদের স্বার্থেই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।”
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্তজ বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে কঠোর। জার্মান শিল্প খাতের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বলছে, অতিরিক্ত শুল্কনীতির ফলে বিশ্বব্যাপী একটি নতুন মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাড়তে পারে মুদ্রাস্ফীতি, কমতে পারে ভোক্তা ব্যয়, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই একতরফা শুল্কনীতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং একটি নতুন ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’-এর সূচনা ঘটাতে পারে।
মন্তব্য করুন